মানুষ পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধির জন্য সীমাহীন কষ্ট করে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি খেয়ে না খেয়ে যান্ত্রিক মেশিনের মতো খেটে যায়। সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় স্বস্তিতে একটু দম ফেলার ফুরসত পায় না। ভুলে যায় সালাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদতের কথাও। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সময়ের মাঝে সে একটু সময় বের করতে পারে না আল্লাহর জন্য। আল্লাহর বিধান পালনের জন্য। তার মস্তিষ্কজুড়ে শুধু একটা চিন্তাই ঘুরপাক খেতে থাকে, কিভাবে সংসারে উন্নতি করা যায়। কিভাবে একটু বেশি উপার্জন করা যায়। এসব চিন্তায় একসময় সে আল্লাহকে ভুলে যায় বেমালুম। তার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় দুনিয়া। অথচ সে জানে না আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হলে আল্লাহ তাকে দান করবেন পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধি। দূর করবেন দারিদ্র্য। অন্তরে ঢেলে দেবেন মানসিক প্রশান্তি। এর বিপরীত হলে আল্লাহ তার অন্তর পরিপূর্ণ করে দেবেন সবধরনের পেরেশানি ও মানসিক অশান্তি দিয়ে। এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত আছে : রাসূলুল্লাহ বলেছেন, মহাপবিত্র আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানি দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব না। (সুনানে ইবনে মাজাহ-৪১০৭)
অন্য হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত আছে; তিনি বলেন, আমি নবী সা:কে বলতে শুনেছি : যার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হবে আখিরাত, তার পার্থিব চিন্তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার চিন্তায় মোহগ্রস্ত থাকে তার যেকোনো উপত্যকায় বা প্রান্তরে ধ্বংস হয়ে যাওয়াতে আল্লাহর কোনো পরোয়া নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪১০৬)দুনিয়ার উপমা পরকালীন সুখ-সমৃদ্ধির তুলনায় দুনিয়া ভোগবিলাসিতা অতি নগণ্য এবং তুচ্ছ। আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া কেমন তার একটি দৃষ্টান্ত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বনু ফিহরের সদস্য মুসতাওরিদ রা: থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি; আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া হলো এতটুকু, যেমন তোমাদের কেউ তার একটি আঙুল সমুদ্রের পানিতে ডুবিয়ে তা তুলে আনল। সে লক্ষ করুক তার আঙুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরেছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-৪১০৮)
এবার ভেবে দেখুন! কোন পথে চলা দরকার আমাদের। দুনিয়ার সামান্য ক্ষণস্থায়ী সুখ-শান্তির দিকে নাকি পরকালের চিরস্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধির দিকে।